ব্রাজিল কিংবদন্তি জাগালো

৯২ এ থামলেন পেলের সতীর্থ ব্রাজিল কিংবদন্তি জাগালো

চারবারের বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিল কিংবদন্তি মারিও জাগালো আর নেই। পরপারে তিনি তার ফুটবল সতীর্থ পেলের অনুগামী হলেন। এর আগে ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৮২ বছর বয়সে মারা যান কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে

তার পুরো নাম মারিও য়োর্গে লোবো জাগালো। মৃত্যু হলো ৯২ বছর বয়সে। তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে মৃত্যুর খবর জানানো হয়।ফুটবলার এবং কোচ হিসাবে চারবার বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ব্রাজিলের এই ফুটবলার। ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে পর পর বিশ্বকাপ জয়ী দলটির উইঙ্গার ছিলেন তিনি।

পেলে, জেয়ারজিনহো ও কার্লোস আলবার্তো পেরেইরাকে নিয়ে গড়া সর্বকালের সেরা আন্তর্জাতিক দলটিরই কোচ ছিলেন জাগালো। জাগালো মাত্র ৩৮ বছর বয়সে কোচ হিসাবে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। বিশ্বকাপ জয়ী দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম কোচ তিনিই। জাগালো ছিলেন খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ী প্রথম ব্যক্তি। ফুটবলার ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্বে তাঁর কৃতিত্বে ভাগ বসিয়েছেন আরো দুজন। তারা হলেন জার্মানির ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার ও ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশ্যাম।

পেলের মৃত্যুর পর ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলের শেষ জীবিত ফুটবলার ছিলেন জাগালো। শনিবার তাঁর মৃত্যুর খবর জানিয়ে ইনস্টাগ্রাম পোস্টটিতে লেখা হয়, “দুঃখের সঙ্গে জানানো হচ্ছে, বিশ্বকাপজয়ী মারিয়ো জাগালো প্রয়াত। তিনি পরিবারকে অসম্ভব ভালবাসতেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তাঁর সঙ্গে কাটানো প্রতিটা সময় উপভোগ করেছি আমরা।”

তিনি বেশ কিছুদিন রিও ডি জেনিরোর এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানানো হয়নি।

জাগালোর জন্ম হয়েছিল ১৯৩১ সালে। তিনি সেনাবাহিনীতেও যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে মারাকানা স্টেডিয়ামে রক্ষী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ১৯ বছরের জাগালো। সেবার দু্ই লাখ দর্শকের উপস্থিতিতে মারাকানায় স্বাগতিক ব্রাজিলকে বিশ্বকাপের ফাইনালে স্তব্দ করে দিয়ে শিরোপা নিয়ে গিয়েছিল উরুগুয়ে। সে কষ্টের কথা কখনোই ভোলেননি জাগালো। আট বছর পর অবশ্য তিনিই ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ এনে দেন পেলের সতীর্থ হিসাবে খেলে।

শোক স্তব্দ ফুটবল বিশ্ব: ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা বলেছেন,‘জাগালো হচ্ছেন কখনো হাল ছেড়ে না দেয়া এক ব্রাজিলীয়র উদাহরন।’ তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনসহ ফুটবল বিশ্ব। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফানতিনো বলেছেন,‘ফুটবলে বিশেষ করে ব্রাজিলিয় ফুটবলে জাগালোর অনুপ্রেরণা সর্বোচ্চ। যে কোন দরকারের সময়ে ব্রাজিল ‘এই অধ্যাপকের’ মুখাপেক্ষি হতো তার শান্তধী উপস্থিতি, চালিকা শক্তি ও টেকনিক্যাল প্রতিভার কারণে। তিনি ব্রাজিল ফুটবলের গডফাদার হিসেবে স্মরিত হবেন। তার অনুপস্থিতি খেলাটির সঙ্গে জড়িত সবার কাছে অনুভূত হবে। বিশেষ করে ফিফায়।’

ফুটবলে ব্রাজিল হচ্ছে সবচাইতে সফল দেশ। তারা পাচবার বিশ্বকাপ জিতেছে এবং সেই ইতিহাসের প্রধান ব্যক্তিত্ব এই ব্রাজিল কিংবদন্তি জাগালো। ১৯৫৮’র বিশ্বকাপের সামান্য আগে ২৬ বছর বয়সে ব্রাজিল দলে তার অভিষেক হয়। ১৯৫০ এর স্বপ্নভঙ্গের বেদনা দুর করা বিশ্বকাপ জয়ী সে দলটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। সেবারের ফাইনালে সুইডেনের বিরুদ্ধে সেলেচাওদের জয়ে ১৭ বছরের পেলে ও ভাভা দুটি করে গোল দেন। আর ৫-২ জয়ে শেষ গোলটি করেছিলেন জাগালো।

১৯৬২’র বিশ্বকাপ জয়েও ছিল তার বড় ভূমিকা। পেলে সেবার প্রাথমিক পর্বে ইনজুরিতে পড়লে জাগালো আক্রমনভাগ থেকে নেমে এসে রক্ষণভাগেও দাড়াতেন। ওই বিশ্বকাপে তার বড় ভূমিকায় ব্রাজিল চেকোশ্লোভাকিয়াকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিল। ঘরোয়া লিগে আমেরিকা, ফ্ল্যামেঙ্গো ও বোটাফোগোর হয়ে খেলা জাগালো দেশের হয়ে ৩৩ ম্যাচ খেলার পর ১৯৬৫ সালে অবসর নেন।

কোচের ভূমিকায়: কোচ হিসেবে তার শুরু হয়েছিল বোটাফোগোতে।  এরপর মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ১৯৭০ এর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কোচ হন তিনি। ওই আসরে পেলে, জেয়ারজিনহো, গেরসন, টোস্টাও ও রিভেলিনোকে নিয়ে গড়া আক্রমনভাগ নিয়ে অপ্রতিরোধ্য এক দল গড়েন তিনি। ব্রাজিল তাদের ছয় খেলাতেই জয়ী হয় এবং ইতালিকে ফাইনালে হারায়৪-১ গোলে।

১৯৭৪ এ জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপেও ব্রাজিল কোচ ছিলেন জাগালো। সেবার সেলেচাওরা চতুর্থ হয়েছিল। এরপর তিনি ব্রাজিলের ক্লাবগুলোর পাশাপাশি কুয়েত, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। আমিরাতিদের এখন পর‌্যন্ত একমাত্র বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার কৃতিত্বও তার হাত ধরেই।

১৯৯৪ বিশ্বকাপের আগে তিনি পেরেইরার কোচিং দলের সমন্বয়ক হিসেবে যোগ দেন। সেটি ছিল ব্রাজিলের চতুর্থ শিরোপা জয় যাতে ইতালিকে পেনাল্টি শুটআউটে হারিয়েছিল হলুদ জার্সিধারীরা। জাগালো ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ে ফেভারিট থাকলেও স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে ফাইনালে ৩-০ গোলে হেরে যায়। সে খেলাটি অবশ্য স্ট্রাইকার রোনাল্ডোর রহস্যময় অসুস্থতার কারণে আজো আলোচনার খোরাক।

ব্রাজিল শেষ যেবার বিশ্বকাপ জেতে, ২০০২ সালের আসরে লুই ফিলিপ স্কোলারির দলটিতেও তিনি ছিলেন বিশেষ উপদেষ্টা। ২০০৬ বিশ্বকাপেও তিনি ছিলেন পেরেইরার সহকারী। ব্রাজিল সেবার অবশ্য কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নেয় এবং জাগালোও এরপরই অবসর নেন জাতীয় দল থেকে।

সব মিলিয়ে ফিফা সভাপতির ভাষায় বলতে হয় ব্রাজিল ফুটবলের অবিচ্ছেদ্য অংশই ছিলেন এই জাগালো।