বরিশালের স্বপ্নপূরণ

ঢাকা: ফরচুন বরিশাল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নতুন চ্যাম্পিয়ন। বরিশালের দলটি আজ শুক্রবার মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে গেলবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিপিএলের শিরোপা জয় করে। এ জয়ে বরিশালের স্বপ্নপূরণ হলো।

চ্যাম্পিয়ন বরিশাল। ছবি: বিসিবি

তামিম ইকবাল (৩৯) ও মেহেদি হাসান মিরাজ (২৯) প্রথম উইকেটেই ৪৮ বলে ৭৬ রানের জুটি গড়ে ফাইনালটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন করে দেন। দলীয় ৮২ রানে উভয় ওপেনারের বিদায়ের পর হাল ধরেন কাইল মায়ার্স। ক্যারিবীয় এই ব্যাটসম্যান ৩০ বলে ৪৬ রান তুললে বরিশালের জয় পাওয়াটা হয়ে দাড়ায় সময়ের ব্যাপার।

বরিশাল এর আগে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে কুমিল্লার দলটিকে ২০ ওভারে ১৫৪ রানে থামিয়ে দেয়। সেখানেই পিছিয়ে যায় বিপিএলের চারবারের চ্যাম্পিয়নরা। কুমিল্লা এদিন না ব্যাটে, না বলে, কোনভাবেই লড়াই চালাতে পারেনি। ফলে অনায়াস জয় পায় তামিম বাহিনী।

এটি ছিল ফরচুন বরিশালের দ্বিতীয় ফাইনাল। আগের ফাইনালে ২০২২ সালে এই কুমিল্লার কাছে হেরেই রানার্সআপ হয়েছিল ফরচুন। অবশ্য ‘ফরচুন বরিশাল’ এর আগে বিপিএলে বরিশালের আরো দুটি দল ফাইনাল খেলেছিল। এর মধ্যে ২০১২ সালের প্রথম বিপিএলে বরিশাল বার্নার্স হেরেছিল চ্যাম্পিয়ন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের কাছে। এরপর বরিশাল বুলস নামে আরেকটি দল ফাইনাল খেলেছিল ২০১৫ বিপিএলে।

নগদ পুরষ্কারে কে কোথায়: বিপিএলের দশম আসরটিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে বরিশাল পেল নগদে দুই কোটি টাকা। রানার্স-আপ কুমিল্লার প্রাপ্তি এক কোটি টাকা। এছাড়া আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ও সেরা রান সংগ্রাহক এবং ফাইনালে সেরা খেলোয়াড় পেয়েছেন সমান ৫ লাখ টাকা করে। অপরদিকে টুর্নামেন্টের সেরা ফিল্ডার পেয়েছেন ৩ লাখ টাকা।

সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী-তামিম ইকবাল: বরিশালকে শিরোপা জেতানোর পাশাপাশি চলতি আসরে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন তামিম। ১৫ ম্যাচে ১২৭.১৩ স্ট্রাইকরেটে ৪৯২ রান করেছেন তিনি। ৫০ ছাড়ানো ইনিংস আছে তিনটি। ব্যাট হাতে ৩৭.৮৪ গড় তার ধারাবাহিকতার প্রমাণ দেয়।

এ ব্যাপারে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কুমিল্লার তাওহিদ হৃদয়ও। ফাইনাল শুরুর আগে তামিম ছয় রানে পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু এদিন তিনি আউট হয়ে যান ১৫ রানে। সব মিলিয়ে হৃদয় ব্যাট হাতে করেছেন ১৪ ম্যাচে ৪৬২ রান। সেটাও ১৪৯.৫১ স্ট্রাইক রেটে।

বিপিএলের ইতিহাসে এর আগে ১৪০-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে চার শতাধিক রান করেছেন কেবল বিদেশীরাই। এবারই প্রথম একমাত্র বাংলাদেশি হিসেব নজির গড়লেন হৃদয়। তাছাড়া ছক্কা মারাতেও হৃদয় ছাড়িয়ে গেছেন স্থানীয় সবাইকে। এবারের টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ২৪টি ছক্কা মেরেছেন তিনি। বিপিএলের এক আসরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ।

তারপরও তামিম রান করার পাশাপাশি সফল নেতৃত্বের কারণে হৃদয়কে ছাড়িয়ে যান।

প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্টও তামিম ইকবাল: ফরচুন বরিশাল যে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো তাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দলটির নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তামিমের অধিনায়কত্ব। তাই আসরের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পেয়েছেন নগদে ১০ লাখ টাকা।

ফাইনালের সেরা ক্রিকেটোর কাইল মায়ার্স: ফাইনালে রান তাড়ায় দুই ছক্কা ও পাচটি চারের মারে দল সর্বোচ্চ ইনিংসটি খেলেন ফরচুন বরিশালের এই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান।

টুর্নামেন্টের সেরা ফিল্ডার – মোহাম্মদ নাঈম: এবারের বিপিএলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার বিবেচিত হন দুর্দান্ত ঢাকার ক্রিকেটার মোহাম্মদ নাঈম। দল প্লে-অফে না গেলেও আসরে মোট আটটি ক্যাচ নিয়েছেন এই ক্রিকেটার।

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক – শরিফুল ইসলাম: দুর্দান্ত ঢাকার পেসার শরিফুল ইসলাম ১২ ম্যাচে নিয়েছেন সর্বোচ্চ ২২ উইকেট। গড় ১৫.৮৬, ইকোনমি রেট ৭.৮১। সেরা বোলিং ৪/২৪।

রোল অব অনার

আসর              চ্যাম্পিয়ন                    রানার্স আপ

২০১২              ঢাকা গ্লেডিয়েটর্স        বরিশাল বার্নার্স

২০১৩              ঢাকা গ্লেডিয়েটর্স        চিটাগং কিংস

২০১৫              কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স   বরিশাল বুলস

২০১৬              ঢাকা ডিনামাইটস       রাজশাহী কিংস

২০১৭              রংপুর রাইডার্স           ঢাকা ডিনামাইটস

২০১৯              কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স   ঢাকা ডিনামাইটস

২০২০              রাজশাহী র‌য়্যালস       খুলনা টাইগার্স

২০২২             কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স   ফরচুন বরিশালস

২০২৩             কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স   সিলেট স্টাইকার্স

২০২৪             ফরচুন বরিশাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স